Saturday, May 11, 2024

না পাওয়া- না করাগুলো

 এই লেখাটা ক্রমবর্ধমান, ক্রমউন্নয়নশীল- গ্লোবালাইজেশানের মত। সেটাই তো স্বাভাবিক তাইনা? যত আফশোস, যত আক্ষেপ, সেগুলো এখানে তোলা থাকবে একে একে ঃ  

১। ছোটোবেলা নাটকটা শিখলে বেশ হত।

এটা লিখেছিলাম ১১ মে, ২০২৪। আজ  অক্টোবর। পুজোতে একটা ছোটো নাটক (যাত্রা বলা বেটার)-এ অংশ নিয়েছি কলেজে। অনিকেতের পাল্লায় পড়ে একটু একটু নেশাও চাপছে। ডিসেম্বরে আই আই সি এম- এর জন্য একটা গোটা নাটক লিখে ফেলেছি। 

Wednesday, March 13, 2024

Doing LaTex

 Hey You, 

$-\frac{\hbar^2}{2m}\nabla^2 \psi =\hat{H} \psi$

$\mathcal{C}$, $\mathbf{C}$, C

Friday, December 8, 2023

Roja: The Sudden Festival

 Life takes its own accidental turns without even caring to let us know. We are merely the audience in the theatre. The actors and actresses, director and producer, background musicians- all are abstract senses that lead us to our destiny- to the Roja. In my case, the honeybee, reading whom I suddenly found myself in a divine garden that day, was a Tamil girl. 

How, when, and where I met her for the first time are all too earthly matters to talk about. Let us just say that when I met her, I had a lost but free soul; I had the soul of a discoverer. The hitchhiker did not realize when, with the irony of time, he came across what he was searching for all these days. He just felt that this stone was something that may be interesting in terms of its own properties, however unknown it maybe to the outer world. So he picked that stone inquisitively and kept it in his pocket. 

When he returned to his home after a long adventure, unloaded his backpack, and stretched his limbs on his very own bed, something tingled into his pocket. It is that special stone. With sleepy and cozy eyes, he looked deep into its texture. His expertise in geography told him that this stone is from a place very near to the source of a river, up above the hills,  into the snow. The boy was immediately teleported to another world where he could only see white snow spreading a sense of peace and maturity in nature. However, the temperature was warm and soothing. On the snow grow tiny wildflowers, and there is divine music accompanied by a harp coming from behind the clouds. Approaching higher hills in search of the musician, the boy gradually started to make sense of the lyrics of the song- "Ankhon mein tu hain, asuo mein tu hain, aankhein bandh kar lo, to mann mein bhi tu hain, khwaabon mein tu, saanson mein tu, Roja!" 

Now, the discoverer is traveling into the unknowns, even when he is at his own home, sleeping in peace. He is constantly exploring a world above this one we see all around us. He plans to go to every corner of this new world, touch every bit of it, know every flare of it, hear every sound of it, and smell all the odors it contains. He has headed already all alone. 

Sunday, May 28, 2023

Sandakphu- My First Trek to Himalayas

 

নেপালি ‘শিকার’ সিগারেটের মোলায়েম গন্ধে এতদিন বাদে পাহাড়ে ফিরে আসা কথামুখ লেখা হল। গাড়ি যাচ্ছিল মিরিকের পাইনছাওয়া রাস্তা ধরে মানেভঞ্জনের দিকে। চা বাগানগুলো অনেকদিন বাদে দেখা হওয়া বন্ধুর মত মিষ্টি হাসছিল। ড্রাইভারের পাশে বসে থাকা তার বন্ধু মানির সদাহাস্যময় স্বভাব খুব শীঘ্রই আমাদের বন্ধুত্বে টেনে আনল। ঠিক হল, মানেভঞ্জনের এক রাত মানির বাড়িতেই থাকা হোক।

মানেভঞ্জন গ্রামে পৌঁছে আমাদের খুব যত্নে নিজের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিল মানি, আলাপ করালো তার বউ ছেলে ভাইয়ের সঙ্গেও। আমরা হেঁটে গ্রাম দেখতে বেরলাম। দেখলাম এই অঞ্চলে ভারত নেপালের সীমান্ত সাবলীলতা ইউরোপীয়ান ইউনিয়নকে হার মানাবে। একটা নর্দমার এপাশ ওপাশ, আর একখান শুধু লাল ব্যানার- তাতে লেখা “সশস্ত্র সীমা বল”। একি বাড়ির বারান্দা নেপালে, বসার ঘর ভারতে। ভেবে কারণ খুঁজে পেলাম না, কে কেনই বা এই সীমান্ত টেনে ছিল কোনো এক সময়ে- আবার এটাও ভাবলাম, ভাগ্যিস সীমান্ত ছিল, নাহলে বাকি গোটা ভারতবর্ষের হত্তাকত্তারা মিলে এই পাহাড়ি শান্তিপ্রিয় হাসিখুশি মানুষগুলোর মনেও সামতলিক জটিলতা না ঢুকিয়ে ছাড়তনা।

একটা নদী নিজের জন্মের সাথে সাথে উত্তাল পাথর ভাঙ্গা ভীষণ রকম সোজা থাকে- আবার যত তার বয়স বাড়ে, সে সমতলে নামে, সে বাঁক নেয়, পলি জমে, স্রোত কমে, জল ঘোলা হয়। মানুষের মনগুলোও নদীর মতন চলে। সমতলে সে বড্ড ঘোলা, আর পাহাড়ে সে বেণী দুলিয়ে ঘুড়ে বেড়ানো যুবতী।

আমাদের পরের কয়েকদিনের সঙ্গী আমাদের গাইড রাকেশের সাথে দেখা হল, সে আমাদের বুঝিয়ে দিল আমাদের যাত্রাপথ। যদ্দুর বুঝলাম- এযাত্রায় গাড়ি যাবার রাস্তাতেই অধিকাংশ সময় আমাদের হাঁটতে হবে, বেশ বিরক্ত হলাম বাঙালি অভিজাতের নাকউঁচু সামন্ততান্ত্রিকতা পাহাড়েও ঝাঁড়ি মেরে যাবে ভেবে।

সে রাত্রে মানির পরিবারের সাথে একসাথে গানবাজনা হল, ওরা নেপালি গান গাইলো- আমরা গাইলাম বাংলা- গিটার দিল সঙ্গত। সাথে ছিল রডোডেনড্রনের ব্র্যাণ্ডি। একটা নতুন খাবার খেলাম- মহিষের মাংসের সসেজ। যদ্দুর বুঝলাম- ঐ খাবার সে বাড়িতে শুধু বাড়ির মালিক মানিই খায়- কিন্তু সে শেধে নিজে পাশে বসে আমাদের সেই খাবার খাওয়ালো- বারবার জিজ্ঞেস করল কেমন লাগছে তাদের বাড়িতে থাকতে, কেমন লাগছে তাদের খাবার। পাহাড় এতটাই আন্তরিক, পাহাড় এতটাই বিশাল অথচ বিনয়ী।

হাঁটা শুরু হল পরের দিন, সাথে নতুন আরেক বন্ধু চিরাগ, তার বহু পূর্ব অভিজ্ঞতা হিমালয়ে, সে পাহাড়চড়ায় পারদর্শী। প্রথম ২ কিলোমিটার খাঁড়া চড়াই চিত্রে পর্যন্ত। সেখানে মনাস্ট্রিতে খেলাম একধরণের তিব্বতী তরল, গরম জলে কিছু স্থানীয় পাতা ফুটিয়ে তাতে ছাগলের দুধের ঘি মিশিয়ে তৈরি, হালফিলের ভাষায় এনার্জি ড্রিঙ্ক বলা যেতে পারে। ফের হাঁটা শুরু হল, কিন্তু শিরে সংক্রান্তি ঝুলিয়ে, শুরু হল একটানা বৃষ্টি, এদিকে আমার কাছে নেই রেইনকোট, পায়ে পরা  নেই প্লাস্টিক- মোজা থেকে জ্যাকেট ভিজে একসা হবার জোগাড়। গাইড নিয়ে চিরাগ চলে গেছে বহুদূর- আমি আর সোমাদিত্য মাঝপথে দিশেহারা, নিরূপায় হয়ে শুধু পা গুনে চলেছি জীবনের মায়া ছেড়ে, বরফ জল ঢেলে ঢেলে মেঘ আসছে আমাদের দিকে, কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে সুস্থ থাকার শেষ আশাটুকু। মাঝে আবার আমি হারিয়েছি আমার ছাতাটাও- কোনোরকমে সেদিনে তুমলিং পৌঁছানো পর্যন্ত বেঁচে থাকাটাই অনেক বড় আশা মনে হচ্ছে। সম্পূর্ণ রাস্তাটা সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের মাঝদিয়ে অসংখ্য বার ইন্দো-নেপাল সীমানার এদিক ওদিক করে চলেছে।

শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়া আমাদের কাছে পৌঁছোবার আগেই আমরা এসে পৌঁছোলাম মেঘমা গ্রামে- যেখানে আমার দুপুরে খাবার ব্যবস্থা। সেখানে আমাদের দেওয়া হল রসুনের একধরণের চাটনি- যা খেলে উষ্ণতা আসে শরীরে। সেই বল নিয়ে শরীর একটু গরম করেই আমরা চললাম সেদিনের শেষ ২ কিমি পেরোতে। মাঝে একটা গ্রাম পড়ল, সর্বোচ্চ ১০ টা বাড়ি নিয়ে গ্রামটা। ঢোকা মাত্রই একটা সমবয়সী ছেলের উষ্ণ হাসি। তারপর একটা আস্তাবল, তার জানলায় বসে আছে হিমাদ্রীর হাসি হাতে করে এক ছোট্ট কিশোরী, সোমাদিত্য তাকে দেখে হাসলে সে লজ্জায় ফরসা গালটা লাল করে ভেতরে চলে গেল। মনে হল যেন সে অনন্তকাল ব্যাপী সেই জানলায় বসে- কোনো পাহাড়ী ছেলের অপেক্ষায়- যে পালিয়ে যাওয়া ঘোড়া খুঁজতে জঙ্গলে গিয়েছিল সেই কবে। আস্তাবলের পাশের একটা কুঁড়ে ঘরে এক সহস্র ভাঁজ পড়া কপালের নিচে প্রশস্ত হাসি অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য- কাছে টেনে নেওয়া সুরে সেই বৃদ্ধ আমাদের রাস্তা বলে দিল। রাস্তায় একজায়গায় ক্লান্ত হয়ে আমরা বসেছিলাম কিছুক্ষণ- নিচে উপত্যকায় খান তিনেক গরু চড়ছিল। পাশে একটা ছোট্ট পাহাড়ী নদী, পলকের মধ্যে একগাদা মেঘ এসে তাদেরকে আমাদের দৃষ্টি থেকে আড়াল করে দিল- আমরাও উঠে পড়লাম- জানিনা কোনো ক্ষুধার্থ চিতার নখর তাদের ওপর এসে পড়েছিল নাকি তারপরেও অনন্ত ভবিষ্যৎ ধরে তারা সেভাবেই চড়ে বেড়ালো সেই ঘাসভূমিতে।

অবশেষে এসে পৌঁছোলাম তুমলিং-এ, কাঁপতে কাঁপতে খোঁড়াতে খোঁড়াতে। সন্ধ্যাটা কাটল আগুনের সামনে ভেজা জামাকাপড় শুকিয়ে আর শরীর সুস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টায়। শুনলাম বছরের অধিকাংশ সময়টাতেই তুমলিং থেমে শুরু করে পরের সম্পূর্ণ রাস্তাটা বরফে ঢাকা থাকে- মনে মনে ঠিক করলাম- ডিসেম্বরে আবার আসছি আমি।

পরের দিন থেকে আর বৃষ্টি পেলাম না। আমরা প্রবেশ করলাম হিমালয়ের এমন এক গুপ্তধনের বাক্সে যেটা বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী রেড পাণ্ডার বসতবাড়ি।  ঝকঝকে রোদ আর ভেজা মেঘের পরকীয়া দেখতে দেখতে চলেছি- রাকেশের থেকে খবর নিলাম আরো অনেক ট্রেক রূটের, যেগুলো একে একে যুক্ত হল আমার পরের কয়েক বছরের সম্ভাব্য কার্যাবলীতে- সিকিমের ইউক্সুম থেকে শুরু হওয়া গোচালা ট্রেক তার মধ্যে অন্যতম। বুঝলাম, প্রথমদিনের শারীরিক কষ্ট ক্ষমতাও বাড়িয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। প্রথমদিনের চেয়ে অনেক দ্রুত, রীতিমত আমাদের গাইড রাকেশের সাথে পা মিলিয়েই আমি অনেক আগে পৌঁছে গেলাম সেদিনের লক্ষ্য কালাপোখরি গ্রাম।

কালাপোখরিতে ট্রেকার ছাড়াও পর্যটকদের গাড়ি থামে- তার কারণ বরফগলা জলে পুষ্ট এক স্বর্গীয় ঝিল। স্থানীয়দের মধ্যে কথিত আছে এখানে মানত করা  ইচ্ছে পূরণের ঘটনা। একটু বেলা হবার আগেই পর্যটকদের ভিড় কমে আসে, রয়ে যায় গুটিকতক ট্রেকার আর স্থানীয় নেপালিরা- মূলত যাদের নিয়ে আমার কৌতুহল। কালাপোখরিতেই আলাপ হল বছর ৬১-র এক বাঙালি ভদ্রলোকের সঙ্গে, তিনি এই নিয়ে ১৪ বার সান্দাকফু আসছেন- তার অভিজ্ঞতা নিয়ে বইও লিখে ফেলেছেন। তার নাম ননীগোপাল সিংহ- আমাদের কাছে এই কয়েকদিনের জন্য তিনি হয়ে গেলেন ‘কাকাবাবু’। তার কাছ থেকে কালাপোখ্রি গ্রামের ইতিহাস শুনলাম, যা খানিকটা এরকম- কে বি লামা নামের একজন তিব্বতীর ১৪ সন্তান, তার ৬তম সন্তানের বাড়ি এখন আছে এই গ্রামে- যেখানে থাকছিলেন কাকাবাবুরা। সেই লামার সন্তানদের নিয়েই গড়ে উঠেছিল কালাপোখরি। পরবর্তী কালে আরো কয়েকঘর মানুষ এসে বাসা বাঁধে। ঝিলের ধারের যে বৌদ্ধ স্তূপকে নিয়ে স্থানীয়দের ঐ ধর্মীয় বিশ্বাস- সেগুলোও লামার অপত্যদেরই প্রতিষ্ঠা। কাকাবাবুর বিশেষ ভাবে মনে পড়ে লামার কনিষ্ঠতম সন্তান মান্নুর কথা। সেই মেয়েটির নাকি খুব সুন্দর গানের গলা- দার্জিলিং-এ কলেজে পড়তে গিয়েছিল সে- সেখানে কোনো এক ইউরোপীয়ানের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় - কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাকি তাদের বিয়ে হয়নি।



"Thumba"


Rhododendron Wine ("Buras")

কাকাবাবুর থেকে জানতে পারলাম, এখানে স্থানীয় দুধরণের মদের কথা- থুম্বা আর ছং। দুটোই পচা মিলেট দানা থেকে তৈরি। আমরা থুম্বা খেলাম সে রাত্রে। আর খেলাম রডোডেনড্রন ওয়াইন- স্থানীয়দের ভাষায় “বুরস”, এবং সেই ফুলেরই ব্রান্ডি- বলা হয় “রক্সি”। পাহাড়ের অন্যতম আকর্ষণ এখানকার কুকুরগুলো, এদের গায়ে দুবার আদর করে হাত বুলিয়ে দিলেই এরা সুন্দর পোষ মেনে যায়, তারপর আপনি যতদূরের পথই পাড়ি দিননা কেন, এরা আপনার সাথে সাথে যাবে, আপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেবে।


The book on Sandakphu by Nanigopal Sinha

পরের দিন আবার হাঁটা শুরু- শেষদিনের চড়াই- সান্দাকফু পর্যন্ত। যত এগোলাম, ভূমিরূপ আরো রূক্ষ হচ্ছে, পাহাড়ের চূঁড়াগুলো হচ্ছে আরো তীক্ষ্ণ, বুঝলাম হিমাচল পেড়িয়ে হিমাদ্রীর পালা এবার। সবচেয়ে খাঁড়া চড়াই এইদিন। সাথে ছিল চিরাগ আর কালাপোখরি থেকে হেঁটে আসা একটা কুকুর। নিজের মনকে অবাক করে শরীর সাধ দিল- কল্পনার অতীত ভাবে আমি চিরাগের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে একই সাথে পৌঁছে গেলাম সেদিন সান্দাকফু- বাকিদের অনেক আগে। পৌঁছে বুঝলাম, “সান্দাকফু পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম শৃঙ্গ” কথাটা সম্পূর্ণতই সীমানার দয়া। জায়গাটার ভারতীয় অংশের সর্বোচ্চ জায়গার চেয়ে ১০০ মিটার দূরে নেপালি হোটেলটাও বেশি উঁচু। তবে ভারত-নেপালের সীমানাচক্করে না ফেসে বা সর্বোচ্চ শৃঙ্গের অহংকারে না ভুগে যদি দুচোখ মেলে তাকাই, দেখতে পাই, ১২ হাজার ফুট ওপরে হেঁটে চলে এলাম এইদুটো পায়ের ওপর ভরসা করে- এই অনুভুতিটা মনে ইচ্ছে জাগায় সমস্ত গ্রহটা চষে ফেলতে, মনে হয় এক ঝড়ে ভাসিয়ে দি মারিয়ানা খাত থেকে এভারেস্ট- সব গুলিয়ে দেওয়ার। একটু বাদে ঝেঁপে শিলাবৃষ্টি নামল, তারপরে চিচিং ফাক।

 



দূরের আকাশ ভরিয়ে দেখা দিল বরফমোড়া শৃঙ্গ গুলো। কাঞ্চনজঙ্ঘা, কুম্ভকর্ণ, চোমোলহরী (ভূটানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ) সহ আরো অনেক। সম্পূর্ণ ঘুমন্ত বুদ্ধ আমাদের হেলায় রেখে নিশ্চিন্তে পৃথিবীর বুকের ওপর নিদ্রারত। ব্র্যান্ডির স্বাদে সামনে কাঞ্চনজঙ্ঘা রেখে সন্ধ্যা নেমে এল ঝুপ করে, আকাশে তখন সহস্র তারার কোলাজ। পরের দিন কাকভোরে রাকেশ ঘর থেকে ডেকে আমাদের বাইরে নিয়ে যেতেই বুঝে গেলাম, এই যাত্রা আমার আশার চেয়েও বেশিকিছু দিয়ে দিলো আমায়, এর চেয়ে বেশি পাওয়ার কিছু ছিলনা। পুর্ব আকাশে লাল সূর্য তখন কালি ছুঁড়ে রঙ্গিন কওরে দিয়েছে বরফে মোড়া পর্বতরাশি- ফলত সোনার রাংতা যেন আকাশে ভাসছে। আগের দিনের চেয়েও উপরি পাওনা মাউন্ট এভারেস্ট, লোতসে আর মাকালু। বেলায় যখন খেয়ে দেয়ে নেমে আসার জন্য রওনা দিলাম, তখনো কাঞ্ছনজঙ্ঘা স্বমহীমায় বিরাজ করছে অর্ধেক আকাশ জুড়ে।



Sleeping Buddha

হাঁটা শুরু করলাম সেপির দিকে- রডোডেনড্রনের ঝোপঝাড় পেরিয়ে দল ছেড়ে একা এগিয়ে গিয়েছি অনেক দূর, একটা চাপা গর্জন আমার বুকের রক্ত হিম করে দিল, তাওবা যদি মনের ভুল বলে ধরে নিতে পারতাম- যদিনা জঙ্গলের সব পাখি একসাথে চঞ্চল হয়ে উঠত। এদিক ওদিক তাকাবার সাহস হলনা,  নিজের মৃত্যু নিজের চোখে দেখার সাহস এখনও হয়নি, দ্রুতপদে এগিয়ে চললাম- পরের ১৫ মিনিট আমাকে অনুসরণ করল সেই গর্জন আর পাতায় খসখস। তারপরে একটা নদী পেরিয়ে ওপারে চলে যেতেই আর সেই শব্দ নেই। কিন্তু তারপর কেমন দেখি আরেক কান্ড। পরপর একি রাস্তার দুপাশে ঝোপে দলে দলে প্রজাপতি, আবার এক এক ঝোপে আলাদা আলাদা রঙের প্রজাপতি ঝাঁকে উড়ছে- এক মূহূর্তের জন্য মনে হল, আমি কি মরে গিয়েছি আর মহাপ্রস্থানের পথে চলেছি! কিন্তু একটু বাদে তিমবুরে গ্রামে এসে মানুষের দেখা পাওয়ায় হতাশই হলাম আবার।



Rhododendron

কিন্তু এই তালে আমি যে ভুল রাস্তা নিয়েছি- তা বুঝলাম কিছুক্ষণ বাদেই, হেঁটে হেঁটে তাই কোনরকমে পরের সবচেয়ে কাছের গ্রামে পৌঁছাবার চেষ্টা করলাম। একটা পাহাড় চড়াই করে অনেক কষ্টের পর বুঝলাম, সব বৃথা- পাহাড়ের নিচ দিয়েই সেপি যাওয়ার রাস্তা। আমার রাস্তা যাবে শ্রীখোলা দিয়ে, আর আমি গিয়ে হাজির হয়েছি আপার শ্রীখোলায়। তবে এই চক্করে পরে দার্জিলিং জেলার এই অংশে সমস্ত ছোট খাটো গ্রাম যেগুলো সিঙ্গালিলার প্রান্তে প্রান্তে লুকিয়ে আছে- তাদের সন্ধান পেলাম বেশ। আলাপ হল বেশ কিছু নেপালি ছেলের সঙ্গে যাদের মূল পেশা ঘোড়া চড়ানো।



Srikhola Bridge on Rimbick River 

অনেক দ্রুত হাঁটা সত্ত্বেও দলের বাকিদের থেকে মিনিট পাঁচেক পরে পৌঁছোলাম আমি- ভুল রাস্তার শ্রীকল্যাণে। সেপিতে আমাদের হোমস্টে তে এসে জুতো খুলতে খুলতে রিম্বিক নদীর ধারে দাঁড়িয়ে শেষ হল হিমালয়ে আমার প্রথম ট্রেক।